লেখক,জনাব সালাউদ্দিন শাহজাদা: আমার রুমটি বারান্দার দিকে, জানালা খুললেই সবুজ আর প্রকৃতির ছোঁয়া একেবারে গায়ে এসে পরশ বুলিয়ে দেয়। আমি এসেই পর্দা সরিয়ে জানালা খোলে বাইরের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ বসে থাকি। সবুজ গাছেদের, নরসুন্দা নদী আর ওপারের রাস্তায় মানুষজনের যাওয়া আসা দেখতে আমার খুব ভালো লাগে। করোনা পরিস্থিতিতে কলেজ বন্ধ, সারাদেশে আংশিক বা অঞ্চল ভিত্তিক লক ডাউন চলছে। জানিনা শেষ পর্যন্ত আমরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবো!
সারাটা কলেজ হেঁটে হেঁটে দেখে এলাম, কয়েকটা ছবিও নিলাম অভ্যেসমত। এমন শুনশান নিরবতা আগে কখনো দেখিনি। দিনের বেলাতেও ক্যাম্পাসের শিয়ালগুলি (চারটি) বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে, যেনো আমি কেউ না!
বসন্ত কাল শেষ হওয়ার পথে। এসময়ে গাছে গাছে এমনিতেই নতুন পাতা গজাতে থাকে। কিন্তু এবারে প্রতিটা গাছ অস্বাভাবিক সতেজ আর সবুজ! মনে হয় প্রতিটা পাতা কেউ যেনো নরম হাতে পরিষ্কার করে মুছে দিয়ে গেছে, গোছলের পরে মায়েরা যেমন বাচ্চাদের গা মুছে তেল মেখে দেয়! ডিপার্টমেন্টের পাশের ডেউয়া গাছটায় প্রচুর ফুল এসেছে। সবুজের ফাঁকে ফাঁকে হলদে ফুলগুলো দেখতে দারুণ লাগছে! রেইনট্রি গাছটা থেকে কী যেন পড়তে দেখে বারান্দায় গেলাম। একটা সোনালী চিলের বাচ্চা! হতবিহ্বল হয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। আমি দেখছিলাম সে কি করে। কেউ কোথাও নেই, সেও বুঝে গেছে। ডানা ঝাপটিয়ে নড়ে চড়ে বসলো। খোলা মাঠে শুরু হলো তার উড়ার চেষ্টা। বাচ্চাটার মাও এসে যোগ দিলো। কোনও ভয় নেই, শংকা নেই! বাইশ মিনিটের মাথায় বাচ্চাটা সবচেয়ে নীচের ডালটায় উঠে যেতে পারলো। আমি ছোট বাচ্চাদের মতোই পুরো ঘটনাটা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলাম!
এই অভাবনীয় দৃশ্যটি, অপরূপ সবুজের সমারোহ আমার জ্ঞান হওয়ার পর কখনো দেখেছি বলে মনে করতে পারছিনা। করোনায় সব মানুষজন গৃহবন্দী, গাড়িগুলি গ্যারেজবন্দী, কারখানা চলছেনা, ইটভাটায় আগুন জ্বলছেনা, নদী নর্দমায় বিষাক্ত বর্জ মিশছেনা, মানুষ আর যানবাহনের পদকম্পন থেমে আছে, শব্দ দূষণ থেমে আছে! আমাদের ধরণী মা একটু নিঃশ্বাস নিতে পারছে তার বুক ভরে। যার সুপ্রভাব প্রকাশিত হচ্ছে প্রকৃতির অনুস্বর্গে!
করোনা থেকে আমাদের নিজেদের রক্ষা করার পাশাপাশি আপনিতেই যা কিছু শিখছি,যদি তা পৃথিবীবাসী চিন্তা করি, প্রকৃতি মায়ের জন্য, নিজেদের দীর্ঘজীবি করার জন্য, পৃথিবীকে অনন্তকাল সুস্থ রাখার জন্য, তবে হয়তোবা জীবকুলও টিকে যাবে আরো অনেক অনেক বেশি সময়কাল।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ত্রান তহবিলে অনুদানের বিষয়ে শিক্ষা অধিদপ্তরের একটি চিঠির বরাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অধ্যক্ষের রুটিন দায়িত্ব পালন করতে কলেজে এসেছিলাম। কলেজে আজ যা দেখলাম, আজ যা ভাবলাম তা দেখা বা ভাবার অবকাশ আদৌ কখনো হতো কিনা তা পরম স্রষ্টাই জানেন!
চিলের বাচ্চাটা চেষ্টা করে নিরাপদ হয়েছে, প্রকৃতি হাসছে প্রাণভরে, মানুষেরা সীমিত উপায় নিয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করছে! এই সহমর্মিতা, এই ভালোবাসা, এই উপলব্ধি কি স্বর্গেও পাওয়া যাবে! না আছে !!??